বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, “বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়েই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। জামায়াতে ইসলামী একটি নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক দল। ইতোমধ্যে মহামান্য হাইকোর্টের রায়ের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন আমাদের নিবন্ধন এবং প্রতীক ‘দাড়িপাল্লা’পুনরায় ফিরিয়ে দিয়েছে। সুতরাং এখন থেকেই আমাদেরকে জনগণের মাঝে দাড়িপাল্লা প্রতীকের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি করতে হবে।”
রোববার (১৫ জুন) সকালে পবিত্র হজ পালন শেষে দেশে ফিরে সিকিরহাট, ফুলতলা বাজার ও শিরোমনি শহীদ মিনার চত্বরে অনুষ্ঠিত পৃথক পৃথক পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রথম পথসভাটি সকাল ১০টায় সিকিরহাট খেয়াঘাটে অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে সভাপতিত্ব করেন ফুলতলা ইউনিয়ন জামায়াতের আমীর মাস্টার মফিজুল ইসলাম। এরপর সকাল সাড়ে ১০টায় ফুলতলা বাসস্ট্যান্ডে উপজেলা জামায়াতের আমীর অধ্যাপক আব্দুল আলীম মোল্যার সভাপতিত্বে দ্বিতীয় পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। শেষ পথসভাটি অনুষ্ঠিত হয় শিরোমনি শহীদ মিনার চত্বরে, যার সভাপতিত্ব করেন খানজাহান আলী থানা জামায়াতের আমীর ডা. সৈয়দ হাসান মাহমুদ টিটো।
এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন, খুলনা জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মুন্সী মিজানুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, জেলা অফিস সেক্রেটারি মো. আশরাফুল ইসলাম, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য মাস্টার শেখ সিরাজুল ইসলাম, জেলা যুব বিভাগ সভাপতি অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা আল মুজাহিদ, জেলা ছাত্রশিবির সভাপতি মো. ইউসুফ ফকির, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের জেলা সহ সভাপতি মো. আল আমিন গোলদার, খানজাহান আলী থানা সেক্রেটারি গাজী মোর্শেদ মামুন, ফুলতলা উপজেলা নায়েবে আমীর অধ্যাপক মাওলানা শেখ ওবায়দুল্লাহ, সেক্রেটারি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মাওলানা সাইফুল হাসান খাঁন, উপজেলা কর্মপরিষদ সদস্য শেখ মো. আলাউদ্দিন, ড. মো. আজিজুল হক, মাওলানা জোবায়ের হোসেন ফাহাদ, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের ফুলতলা উপজেলা সভাপতি আব্দুল আলিম শেখ, পেশাজীবি বিভাগের সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম জমাদ্দার, ফুলতলা ইউনিয়ন জামায়াতের সেক্রেটারি হাফেজ আল আমিন গাজী, দামোদর ইউনিয়ন আমীর ইঞ্জিনিয়ার সাব্বির আহমদ, সেক্রেটারি মাওলানা মুস্তাফিজুর রহমান, জামায়াত নেতা আব্দুল জলিল শেখ, এএইচএম শফিউল্লাহ হাজেরী, আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “বিগত ৫৪ বছরে দেশের মানুষ নানা দলের শাসন দেখেছে, কিন্তু কাঙ্ক্ষিত কল্যাণ পায়নি। বরং দেশকে হত্যা, লুটপাট, দুর্নীতি, অবিচার ও দুঃশাসনের অন্ধকারে ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছে। আজ মানুষ বলছে— সব দলের শাসন দেখা হয়েছে, এখন ইসলামী শাসনের প্রয়োজন।”
তিনি বলেন, “আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান ইতোমধ্যে কল্যাণমুখী রাষ্ট্রের রূপরেখা দিয়েছেন। যেখানে থাকবে না লুটপাট, থাকবে না বৈষম্য। যুবকরা লেখাপড়া শেষে কাজ পাবে। চাকরি না পাওয়া পর্যন্ত বেকার ভাতা নিশ্চিত করা হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আগামী সংসদে যদি ইসলামপ্রিয় ও সৎ ১৫১ জন সদস্য নির্বাচিত হয়ে যান, তবে বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থেই সোনার দেশে রূপান্তরিত হবে। শিক্ষা, চিকিৎসা, খাদ্য ও কর্মসংস্থানের টেকসই উন্নয়ন হবে।”
২৪’র গণঅভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “আমরা নতুন একটি সুযোগ পেয়েছি বাংলাদেশকে নতুন করে গড়ার। দুই হাজারের বেশি শহীদ ও ত্রিশ হাজার পঙ্গু ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগ যেন বৃথা না যায়। আর যেন কোন শক্তি ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে না পারে, সেই দায়িত্ব আমাদের সকলের।”
সাবেক এমপি হিসেবে নিজের কার্যকালের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “২০০১-২০০৬ মেয়াদে ফুলতলা-ডুমুরিয়ায় সন্ত্রাস নির্মূল ও সুষম উন্নয়নের অঙ্গীকার নিয়ে কাজ করেছি। আমার কোনো হুলকুম দিয়ে হারাম অর্থ প্রবেশ করেনি, ইনশাআল্লাহ আগামীতেও করবেনা।”
সভা শেষে ফুলতলা উপজেলা জামায়াতের আমীর অধ্যাপক আব্দুল আলীম মোল্যা সিকিরহাট খেয়াঘাটে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।